স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২৭ জুলাই : ভঙ্গ হয়ে গেল ‘তৃষার তৃষ্ণা/আকাঙ্ক্ষা/ ইচ্ছা।’ আর স্কুলে যাবে না তৃষা! শিক্ষক শিক্ষিকারা অপমান করেছে বলে মা, বাবার কথা একবারও না ভেবে জীবনকে শেষ করে দিল দশম শ্রেণীর তৃষা। কৃষক পরিবারের মেয়ে তৃষা মজুমদার। সংসারে আর্থিক অভাব অনটনের জন্য দিনে এক বেলা ভাত জোটবে কিনা তারও ভরসা ছিল না তৃষার। কিন্তু ছোট থেকেই পড়াশোনা মেধাবী। ক্লাস প্রথম স্থান দখল করে সকলের মন জয় করে নিত কৃষক পরিবারের তৃষা। বাবা পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে বলে প্রাইভেট টিউটরের বেতন দিতেন তিশার পিসি। মা, বাবা-পরিজনদের একটাই আশা ছিল আর কয়েক বছর, তারপরই তৃষা নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াবে। কিন্তু আজ মা, বাবার তৃষা নেই, আর স্কুলে যাবে না সে। ক্লাসে ফার্স্ট হবে না তৃষা।
শিক্ষক-শিক্ষিকার অপমান অপদস্থতা সহ্য করতে না পেরে নর্ম, ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের তৃষা নিজেকেই শেষ করে দিল। ঘটনার বিবরনে জানা যায় বিলোনিয়া মহকুমার বরপাথরি সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা সমর মজুমদারের কন্যা তিশা মজুমদার বড়পাথরি সোনাপুর স্কুলে দশম শ্রেনীর ছাত্রী। জানা যায়, গত ২৪ জুলাই বিদ্যালয়ে টেষ্ট পরিক্ষায় বায়োলজির খাতা দেয়। বায়োলজিতে ১৪ নাম্বারের মধ্যে ১৩ নাম্বার পেয়েছে তৃষা। পরিক্ষায় একটি প্রশ্নে দুটি উত্তর লিখেছিল। উত্তরটি সঠিক হবার পরেও এক নাম্বার কেটে দেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিনা দাস পাটারি। তারপর এই শিক্ষিকার নিকট গেলে তিনি তৃষাকে স্টাফ রুমে নিয়ে গিয়ে অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে নিয়ে অপমান অপদস্ত করে নানা ভাষায় কটুক্তি করেছে বলে অভিযোগ। শিক্ষিকা বিনা দাস পাটারির এই ধরনের ব্যাবহারে মর্মাহত হয়ে তৃষা মজুমদার বাড়ীতে এসে ঘাস মারার কীটনাশক ঔষধ পান করে অবুঝ তিশা। পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ির লোকজনেরা বড়পাথরি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময় তিশার ছোট বোন ঘরের পেছনে একটি কীটনাশক ওষুধের বোতল পায়। তখন বুঝতে পারে তার বোন কীটনাশক ঔষধ খেয়েছে। এ বিষয়ে চিকিৎসককে জানালে সেদিনই তিশাকে শান্তির বাজার জেলা হাসপাতালে রেফার করেন। শান্তির বাজার জেলা হাসপাতালে একদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জুলাই তৃষাকে পুনরায় আগরতলা জিবি হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
কিন্তু তৃষার বাবার আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল সেদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করে মেয়েকে জিবি হাসপাতালে আনতে পারেন নি। ২৬ জুলাই ৩০০ টাকা জোগাড় করে মেয়েকে জিবি হাসপাতালে আনেন। রবিবার সকাল সাড়ে সাতটার নাগাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অভাব অনটনের লড়াকু মেধাবী তৃষা। চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় মা-বাবাকে দিশা বলে যায় শিক্ষক শিক্ষিকার অপমান আর সহ্য করতে পারেনি। কান্নায় ভেঙে পড়ে মা-বাবা। খবর পেয়ে জিবি হাসপাতালের মর্গে ছুটে যান কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। চোখের জল আটকে থাকা বাবার কাছ থেকে জানতে পারলেন এই ঘটনা। পাশে থাকার বার্তা দেন। বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন অসহায় বাবাকে জানান উনার মেয়ের শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করবে তিনি। মহিলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের এহেন ভূমিকা জানতে বিদ্যালয়ে যাবেন তারা। এদিন অসহায় পিতাকে মেয়ের মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা তিনি। মেয়েকে মানুষ করে তুলতে অসহায় পিতা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস হেরে যাবেন কেইবা জানত। তবে প্রশ্ন হল স্টাফ রুমে নিয়ে গিয়ে যখন মেয়েটিকে অপমান অপদস্ত করা হয়েছে তখন অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষাকারাও কিভাবে বিষয়টি মেনে নিলেন। প্রশ্ন যারা তৃষাকে অপমান করেছে তারাই কি সমাজের মেরুদন্ড?

