স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৩০মে : কৈলাসহরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে মন্ত্রীর সামনে ইঞ্জিনিয়ারকে বিক্ষোভ। জানা যায়, কৈলাসহর শহর এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজে প্রথম থেকেই দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাইডলাইন উপেক্ষা করে ঠিকাদার তথা মাহি কনস্ট্রাকশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে শহর বাসীরা কাজের শুরু থেকেই যে অভিযোগ করে আসছিলো। তা সরজমিনে তদন্ত করতে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যেই পরিদর্শন করেন মন্ত্রী টিংকু রায় সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা। ম
ন্ত্রী টিংকু রায় ছাড়াও পরিদর্শন দলে ছিলেন ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলিপ কুমার চাকমা অতিরিক্ত জেলাশাসক এল দারলং, ঊনকোটি জেলার সরকারি আইনজীবী সন্দীপ দেবরায়, স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রনজয় দেববর্মা। শহরের গোবিন্দপুর, বৌলাপাশা, দুর্গাপুর, সোনামারা, সিনেমা হল পাড়া, পূর্ব দূর্গাপুর, কিনাইরচড় প্রভৃতি এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধ দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর পর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বিগত এক মাস আগে থেকে। শুধুমাত্র বাঁধ সংস্কারই নয় কারণ, পাশ্ববর্তী বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া বাঁধ বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ন অবৈধভাবে রাতের অন্ধকারে বাঁধ উঁচু করে দেওয়ার কারনে আসন্ন বর্ষায় গোটা কৈলাসহর জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকেই তড়িঘড়ি রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা করে কৈলাসহরের মনু নদীর পাড়ের বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি বাঁধকে আরও উঁচু এবং প্রসস্থ করার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু, কাজের বরাদপ্রাপ্ত মাহি কনস্ট্রাকশনের কর্নধার তথা ঠিকাদার আব্দুল মান্নান কাজের শুরু থেকেই দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ।
ঠিকাদার দপ্তরের গাইডলাইন মেনে কাজ করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। দপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী বাঁধের উপর প্রতি কুড়ি সেন্টিমিটার মাটি ফেলার পর ‘শিপ ফুট রোলার’ নামক ভারী মেশিন দিয়ে ভাইব্রেটিং করে জল ফেলে ফের নর্মাল রোলার দিয়ে ভাইব্রেটিং করে আবার কুড়ি সেন্টিমিটার মাটি ফেলে একইভাবে কাজ করার কথা ওয়ার্ক অর্ডারে থাকলে ঠিকাদার আব্দুল মান্নান তা করছেন না বলে স্থানীয় বিজেপি নেতা অরুন সাহা মন্ত্রী টিংকু রায় এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন বিগত এক সপ্তাহ পূর্বে। বিজেপি নেতা অরুন সাহা এও জানান যে, ‘শিপ ফুট রোলার’ ঠিকাদার আব্দুল মান্নানের নেই, এমনকি গোটা ঊনকোটি জেলা, ধলাই জেলা এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলাতেই কারোর কাছেই ‘শিপ ফুট রোলার’ মেশিনটি নেই। তাছাড়া ওয়ার্ক অর্ডারে এও উল্লেখ ছিলো যে, যেসব জায়গায় বাঁধের পাশে ড্রেন থাকবে সেই জায়গার ড্রেন ভেঙ্গে গেলে ড্রেন নির্মানও করে দিতে হবে। কিন্তু ঠিকাদার সেই কাজটুকুও করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রী টিংকু রায় সরজমিনে বাঁধের কাজ পরিদর্শনে আসার পর স্থানীয় এলাকাবাসীরা মন্ত্রীর সামনেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রনজয় দেববর্মার উপর উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এমনকি, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে উচ্চবাচ্য কথাও শোনান এলাকাবাসীরা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর বক্তব্য, বাঁধের উপর মাটি ফেলে ঠিকাদারকে আর দেখা যাচ্ছে না। বিগত দশ পনেরো দিন ধরে কৈলাসহরে লাগাতার বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টির ফলে বাঁধের মাটি মনু নদীতে এবং লক্ষীছড়ার জলে পড়ছে। তাছাড়া বাঁধের পাশের বাড়ি ঘরের ভিতরেও ঢুকছে। বাঁধের উপর দিয়ে এলাকাবাসীরা পায়ে হেঁটে চলাফেরাও করতে পারছে না। বাঁধের অবস্থা উল্টো বিপদজনক হয়ে পড়েছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে মন্ত্রী জানান যে, এভাবে অফিসারের উপর ক্ষুব্ধ হওয়াটা ঠিক নয়, কিছুটা বুঝতে হবে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টি বন্ধ করতে পারবে না সরকারি অফিসার। যেভাবে বাংলাদেশের সরকার তাদের অঞ্চলে রাতের অন্ধকারে বাঁধ উঁচু করেছে এবং এই উঁচু করার ফলে কৈলাসহর জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকেই সবাই উদ্বিগ্ন হয়েছেন এটা স্বাভাবিক। এটা এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে গেছে। তবে, কাজের গুনগত মান ভালো হচ্ছে না এটা খতিয়ে দেখা হবে এবং বিহিত ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রীর আশ্বাসে এলাকাবাসীরা শান্ত হয়েছেন। এখন দেখার কাজ কতটা স্বচ্ছ ভাবে হয়। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না ঠেলার নাম বাবাজি।

