Friday, November 14, 2025
বাড়িখেলা২১ বছর ধরে ‘দুনিয়ার সেরা কাজ’ করে গর্বিত অ্যান্ডারসন

২১ বছর ধরে ‘দুনিয়ার সেরা কাজ’ করে গর্বিত অ্যান্ডারসন

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৩ জুলাই: টেস্ট শুরুর আগেই জেমস অ্যান্ডারসন বলেছিলেন, বিদায় বেলায় কাঁদতে চান না। সেই কথা তিনি রেখেছেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিনটিতে মাঠে নামার সময়, ম্যাচ শেষে সবার শুভেচ্ছা-অভিনন্দনের পালায়, শেষ বারের মতো মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, এরকম বারবার নানা সময়ই আবেগময় হয়ে পড়েছেন তিনি। কিন্তু চোখের জল ঝরেনি। কথা বলতে গিয়ে অবশ্য কখনও কখনও ধরে এসেছে তার গলা। কবে শেষ পর্যন্ত কণ্ঠে জোর নিয়েই বললেন, ইংল্যান্ডের হয়ে এত বছর খেলতে পারা তার জন্য কতটা গৌরবের।

অ্যান্ডারসনের শেষ টেস্ট শেষ হয়ে গেছে একটু দ্রুতই। লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে আড়াই দিনও লাগেনি ইংল্যান্ডের। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসেও তার বোলিং ছিল ক্ষুরধার। দুর্দান্ত এক সুইঙ্গিং ডেলিভারিতে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে বোল্ড করেছেন। পরে আলিক আথানেজ ও জশুয়া দা সিলভার উইকেট নিয়েছেন।২১ বছর আগে লর্ডসে ৫ উইকেট নিয়ে টেস্টে অভিষেক তার। একই প্রাঙ্গনে ৫ উইকেট নিয়ে শেষ করার সম্ভাবনাও জেগে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে বিদায় বেলায়ও তেজ দেখিয়ে দিতে পেরেছেন।

শুক্রবারই যে তার ক্যারিয়ারের শেষ দিন হবে, তা একরকম নিশ্চিত ছিল। পরাজয়ের দুয়ারে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ দিন মাঠে নামার সময় তাকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেয় দুই দল। আগের দুই দিনের মতোই মাঠে ছিলেন তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানেরা। দর্শকদের ভালোবাসার জোয়ার তো ছিলই।সব মিলিয়ে তিনি আপ্লুত। যার নেতৃত্বে তার টেস্ট অভিষেক, সেই নাসের হুসেইন তার বিদায়ী সাক্ষাৎকার নিলেন ম্যাচের পর দলের ড্রেসিং রুমে গিয়ে। অ্যান্ডারসন বললেন, তার জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারা।

“আজকের সকালটা অবশ্যই বেশ আবেগময় ছিল…। দুই দল সারিবদ্ধ দাঁড়িয়েছে আমার জন্য, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া, সবকিছুই ছিল স্পেশাল। হ্যাঁ, এখনও চেষ্টা করছি আটকে রাখতে (চোখের পানি)…। আমি স্রেফ গর্বিত যে, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে খেলে গেছি। অবিশ্বাস্য অর্জন এটি, বিশেষ করে একজন ফাস্ট বোলারের জন্য।”

“আমি খুবই খুশি যে এতটা দূর আসতে পেরেছি এবং ক্যারিয়ারে বেশির ভাগ সময় চোটমুক্ত থাকতে পেরেছি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা… এটা দুনিয়ার সেরা কাজ এবং আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে কাজটা এত লম্বা সময় ধরে করতে পেরেছি।”পেস বোলার হয়েও ১৮৮ টেস্ট খেলা, ৭০৪ উইকেট, তার এসব রেকর্ড হয়তো ভাঙবে না কখনোই। উইকেট থাকতে পারত আরও একটি। শেষ দিনে গুডাকেশ মোটি তার বলে সহজ ক্যাচ দিলেও তিনি তা নিতে পারেননি। সেটি নিয়ে খানিকটা মজাও করলেন তিনি।

“আমি এখনও বিরক্ত যে, ওই ক্যাচটি ফেলে দিয়েছি! তবে গোটা সপ্তাহটি ছিল অসাধারণ। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া, মাঠে যারা ছিলেন, সতীর্থরা, সবার ভালোবাসা, সবকিছুতে আমি অভিভূত। যা কিছু অর্জন করেছি… আমি স্রেফ গর্বিত।”সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে মোট ১০৯ জন সতীর্থের সঙ্গে টেস্ট খেলেছেন তিনি। স্টুয়ার্ট ব্রডের মতো কেউ কেউ সতীর্থ থেকে হয়ে উঠেছেন কাছের বন্ধু। এটিকে বড় প্রাপ্তি মানছেন তিনি।“অসাধারণ কিছু ক্রিকেটারের সঙ্গে ক্যারিয়ারজুড়ে খেলতে পারাটা দারুণ সৌভাগ্যের… খেলাটির ইতিহাসের সেরাদের কজন… তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, মানুষ হিসেবে ওরা দারুণ এবং আজীবনের কিছু বন্ধু পেয়েছি।”

“এই খেলাটি বিশেষ কিছু… আমার মনে হয় না, অন্য কোনো খেলায় এরকম বন্ধুত্ব, এমন আবহ থাকে। আমার ভেতরের একটি অংশ একটু ইর্ষান্বিত যে, এই ছেলেরা আগামী কয়েক বছর সেই স্বাদটা পাবে। তরুণ একটি দল এটি, দুর্দান্ত সব প্রতিভা আছে এবং ওদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করা, কারণ এই ভ্রমণ অসাধারণ।”ইংল্যান্ডের হয়ে রেকর্ড ৮৩টি টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছেন অ্যান্ডারসন। চোট ও ফর্মহীনতা মিলিয়ে ২০০৫ অ্যাশেজে তিনি খেরতে পারেননি। তবে পরে অ্যাশেজ জয়সহ আরও দারুণ সব জয়ের স্বাক্ষী হয়েছেন। দুই যুগের খরা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অ্যাশেজ জয়, ২০১২ সালে ভারতে গিয়ে সিরিজ জয়ের মতো স্মরণীয় সব জয়ের দেখা পেয়েছেন।

তার কাছে দলের এসব জয়ই ক্যারিয়ারের সেরা স্মৃতি।“টেস্ট ম্যাচ জয়, টেস্ট সিরিজ জয়… ইংল্যান্ড দলে আসার পর থেকে কেবল এটিকে ঘিরেই ছিল আমার সব আগ্রহ। অস্ট্রেলিয়ায় জয়, ভারতে জয়, বিশ্বের এক নম্বর দল হয়ে ওঠা এবং এসব সিরিজগুলোয় অবদান রাখতে পারা, উইকেট শিকার করা… এই স্মৃতিগুলোই রয়ে যাবে। খেলাটির কিছু গ্রেটের সঙ্গে খেলতে পারা.. সবকিছুই খুবই খুবই স্পেশাল।”অবসর নিলেও অবশ্য আপাতত ইংল্যান্ডের ড্রেসিং রুমেই থাকছেন তিনি। এই মৌসুমে দলের ‘ফাস্ট বোলিং’ মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। শেষ টেস্টের কদিন আগেই ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে এক ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছেন। দল তাকে রাখতেই চাইবে। তবে তিনি থাকবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন পরে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: Alert: Content selection is disabled!!