Tuesday, May 20, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদসিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজে ঝাঁকুনির ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজন আইসিইউতে

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজে ঝাঁকুনির ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজন আইসিইউতে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৯ মে: গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বাসিন্দা ইভা খুর কাছে একটি ফোনকল আসে। বলা হয়, তাঁর পরিবারের সদস্যরা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের যে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করছিলেন, সেটি মাঝ আকাশে প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তা না করতে তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়।উড়োজাহাজটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জরুরি অবতরণ করার কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ৪৭ বছর বয়সী ইভা তাঁর স্বজনদের খোঁজ পাচ্ছিলেন না। লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী ওই উড়োজাহাজে ইভার ভাই এবং ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ছিলেন। সঙ্গে তাঁদের এক বন্ধু এবং পরিবারের আরও চার সদস্য ছিলেন।অবশেষে ঘটনার দিন গভীর রাতে ভাই খু বু লিওংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। বোন ইভা খুকে মাত্র একটি শব্দ বলেছিলেন ভাই। তা হলো ‘আইসিইউ’।

টেলিফোনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইভা খু বলেন, ‘এরপর তাঁর কোনো কথা আমরা শুনতে পাইনি। আর এতে আমি আরও দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।’ এরপর ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় তাঁর। ভাইয়ের স্ত্রীও জানান, তিনি হাসপাতালে আছেন। কিন্তু অন্যরা কোথায় আছেন, তা জানেন না।২১ মে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এসকিউ৩২১ ফ্লাইট আকাশে প্রতিকূল পরিস্থিতির কবলে পড়ে। এতে উড়োজাহাজটিতে বেশ ঝাঁকুনি হয়। এ ঘটনায় এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ঝাঁকুনির ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন। অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত যাত্রীদের মধ্যে ২০ জনের বেশি মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছেন।উড়োজাহাজটি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছিল। পরে এটি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জরুরি অবতরণ করে।

ইভা খু বলেন, ২১ মে রাতটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় কেটেছে তাঁর। স্বজনেরা মৃত না জীবিত, কিংবা তাঁদের আঘাত কতটা গুরুতর, সে ব্যাপারে তাঁদের কোনো ধারণা ছিল না।খু বু লিওং (ডানে) এবং স্ত্রী স রং (ডান থেকে দ্বিতীয়) সুইজারল্যান্ড ও লন্ডনে দুই সপ্তাহের ভ্রমণে গিয়েছিলেনছবি: বিবিসির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীতপরদিন কুয়ালালামপুর থেকে ব্যাংককে গিয়ে দেখেন, সাতজনের সবাই হাসপাতালে ভর্তি। এর মধ্যে পাঁচজনকে সামিটিভেজ শ্রীনাকারিন হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।ইভা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তাঁদের দেখতে পেয়ে আমি স্বস্তি পেলাম। কিন্তু মেরুদণ্ড ও পিঠের আঘাতের কারণে তাঁদের অনেকের ঘাড় ও মাথায় ব্রেস (গলায় ও মাথায় আঘাত পাওয়া রোগীদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরানো ছিল। তা দেখে আতঙ্ক অনুভব করছিলাম।’

তবে উড়োজাহাজে সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, তা স্বজনদের জিজ্ঞাসা করতে ইভাকে আরও কয়েকটা দিন পার করতে হয়েছে।ইভা খুর ভাই খু বু লিওং এবং ভাইয়ের স্ত্রী স রং সুইজারল্যান্ড ও লন্ডনে দুই সপ্তাহের ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরছিলেন। লন্ডন থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর একটি ট্রানজিট স্টপ। উড়োজাহাজটিতে ২১১ যাত্রী ও ১৮ ক্রু সদস্য ছিলেন।  ইভা জানান, ভাইয়ের কাছ থেকে সেদিনের ঘটনার কিছুটা বর্ণনা শুনেছেন তিনি, খু বু লিওং তাঁর সিটবেল্ট খোঁজার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু কিছু করার আগেই উড়োজাহাজের ছাদের সঙ্গে ধাক্কা খান। ওভারহেড লাগেজ কম্পার্টমেন্টের সঙ্গে ধাক্কা খান তিনি। কয়েক সেকেন্ড পরে তিনি করিডরের ওপর উল্টে পড়েন। তাঁদের জিনিসপত্র সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।

খু বু লিওং ও তাঁর স্ত্রী স রং উড়োজাহাজের মাঝামাঝি অংশের কাছের আসনে বসেছিলেন। স রং দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ঝাঁকুনির সময় তিনি আসন থেকে ছিটকে পড়েন। এতে তাঁর পিঠে আঘাত লাগে। পরে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে।ইভা জানান, পরিবারের পাঁচ সদস্যকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এ পাঁচ সদস্যের মধ্যে তাঁদের বয়স্ক এক চাচাও আছেন। সেই চাচা বলেছেন, শিশুর প্রথম হাঁটা শেখার মতো করেই তিনি এখন হাঁটতে শিখছেন।ইভা আরও বলেন, ‘আমার ভাই এখনো ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। হাসপাতালের এখানে-সেখানে তাঁকে হুইলচেয়ারে করে নিতে হয়।’

ইভার ভাইয়ের বন্ধুর অবস্থা খুবই নাজুক। তাঁকে মাথা ও গলায় ব্রেস পরিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁকে আরও কিছুদিন এভাবে বিছানায় থাকতে হবে।ইভা বলেন, ‘এসব আঘাত কতটা স্থায়ী হতে পারে, সে ব্যাপারে চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাওয়ার মতো সাহস আমাদের হয়নি। সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলাটা চিকিৎসকদের জন্য সত্যিই কঠিন। তাঁরা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পরও শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।’গত বুধবার ব্যাংককে পৌঁছানোর দুশ্চিন্তার কারণে ইভা খু ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারছিলেন না। গত শুক্রবার রাতে ঠিকমতো খেতে পেরেছেন।ইভা বলেন, ‘তাঁদের ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে দেখে এবং অস্ত্রোপচারগুলো ভালোভাবে শেষ হওয়ায় অবশেষে আমি খাওয়ার জন্য কিছুটা সময় পেলাম।’

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!