Saturday, July 5, 2025
বাড়িখেলারেয়াল মাদ্রিদের আরেকটি ‘জাদুকরি’ রাত

রেয়াল মাদ্রিদের আরেকটি ‘জাদুকরি’ রাত

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৯ মে: গত কয়েক মৌসুমে প্রত্যাবর্তনের কত গল্পই তো লিখেছে রেয়াল মাদ্রিদ। সেই তালিকায় এবার ঢুকে গেল খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আরও একটি ধ্রুপদি অধ্যায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে বুধবার আলফুঁস ডেভিসের দুর্দান্ত গোলে বায়ার্ন মিউনিখ এগিয়ে ছিল ৮৭ মিনিট পর্যন্ত। ওয়েম্বলির ফাইনালের সঙ্গে জার্মান ক্লাবটির দূরত্ব ছিল স্রেফ আর কয়েক মিনিটের। কিন্তু রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে তো শেষের আগে শেষ নয় কিছুই! 

বায়ানের কিংবদন্তি হয়ে ওঠা মানুয়েল নয়ারের ভুল থেকে একটু আগেই মাঠে নামা হোসেলুর গোলে সমতায় ফেরে রেয়াল ৮৮তম মিনিটে। মিনিট তিনেক পর সেই হোসেলুই আরেকটি গোল করে দলকে পৌঁছে দেন ফাইনালে। রেয়ালের জন্য এমন জয় নতুন কিছু নয়। ডাগআউটে থেকে আনচেলত্তিই এরকম জয়ের স্বাক্ষী হয়েছেন কত! ২০২১-২২ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউটেও একের পর এক ম্যাচে পেছন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেয়াল। সেবারও সেমি-ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে বিদায়ের দুয়ারে চলে গিয়েও শেষ সময়ের নাটকীয় দুই গোলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা অবিশ্বাস্যভাবে।ঘুরে দাঁড়ানো বা শেষ সময়ে গোল করে ম্যাচ জেতা কিংবা হার এড়ানোর নজির এই মৌসুমেও কম নেই। আরও একটি এরকম ম্যাচের পর স্বয়ং কোচ আনচেলত্তিই কোনো ফুটবলীয় ব্যাখ্যা পাচ্ছেন না খুঁজে। 

“আবারও এটা ঘটল… এতবার এরকম হয়েছে, এতবার… এখন আসলে এটা ব্যাখ্যাতীত ব্যাপার।”“সমর্থকরা একটি বড় কারণ। তারা যেভাবে দলকে প্রেরণা জোগায়, এই স্টেডিয়াম, এখানকার আবহ, সবকিছুই এটা সম্ভব করেছে। আর ছিল এক দল ফুটবলার, যারা কখনোই বিশ্বাস হারায়নি। তবে এটা স্রেফ জাদুকরি, এছাড়া অন্য কোনো ব্যাখ্যা আর নেই। এই টুর্নামেন্ট, এই স্টেডিয়াম আর এখানকার আবহ এই জাদু বের করে আনে।”চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছে রেয়াল মাদ্রিদ। তাদের সামনে এখন জোড়া ট্রফির হাতছানি। অথচ মৌসুমের শুরুতে এমন কিছু ভাবাটাও ছিল একরকম অবান্তর। 

কারিম বেনজেমা চলে যাওয়ার পর উপযুক্ত কোনো বিকল্প আনা হয়নি ক্লাবে। দলের সেরা গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া চোট নিয়ে ছিটকে যান লম্বা সময়ের জন্য। মূল দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এদের মিলিতাও ও ডাভিড আলাবাকেও মেনে নিতে হয় একই দুর্ভাগ্য। দলের সেরা তারকা ভিনিসিউস জুনিয়র লম্বা সময় ছিলেন মাঠের বাইরে। ছোটবড় মিলিয়ে ৩০টির বেশি চোটের ঘটনা ছিল এই মৌসুমে। আনচেলত্তি অকপটে স্বীকার করলেন, দলের কাছে এত কিছুর প্রত্যাশা তার নিজেরও ছিল না মৌসুমের শুরুতে। “কঠিন একটি ম্যাচ ছিল। আমরা প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছি, নিয়ন্ত্রণ ছিল আমাদেরই, কিন্তু পিছিয়ে পড়েছি। এরপর আমাদের মানসিক শক্তি ছিল নিজেদের হারিয়ে না ফেলার। সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, ক্লাবের প্রতিও। সবকিছুর ওপরে, খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানাতে চাই। এমন একটি মৌসুম তারা ক্লাবকে এনে দিয়েছে, যেটির প্রত্যাশা কারও ছিল না।”

“এই দল এত ভালো করে ফেলবে, এটা আসলে আমিও ভাবতে পারিনি। ফাইনালে উঠতে পারাই বিশাল সাফল্যের। এরপর যা হওয়ার, হবে।”আনচেলত্তি বললেন, চোটে জর্জরিত হয়েও সেসবকে ব্যর্থতার ঢাল না বানিয়ে সাফল্য খোঁজার প্রেরণা হিসেবে নিয়েছে দল। “অনেক অনেকট চোট সমস্যা ছিল আমাদের। কোর্তোয়া, মিলিতাও, আলাবার চোটের কথা তো সবাই বলেছে, আরও ছিল। কিন্তু আমরা কখনোই অজুহাত খুঁজিনি। সমস্যাগুলোকেই এই দল ইতিবাচক করে তুলেছে, নিজেদের মূল্য ও মানসিকতা বুঝিয়ে দিয়েছে।”

এই মৌসুমে দলে এসেই অসাধারণ পারফরম্যান্সে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন জুড বেলিংহ্যাম। দলের মানসিকতার দলে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার মুখেই ফুটে উঠল দলের সেই অজেয় চরিত্রের কথা।  “এই মৌসুমে অনেকবারই অনেকের মনে হয়েছে আমরা শেষ, আর সম্ভব নয়… কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি। কে গোল করবে, সেটা ব্যাপার নয়। কিন্তু কেউ না কেউ গোল করবেই… সেই হার না মানা মানসিকতা এই দলের আছে।”বেলিংহ্যামের আগের দল বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষেই এখন ফাইনালে খেলবে রেয়াল মাদ্রিদ। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হবে আগামী ১ জুন। 

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!