Thursday, November 13, 2025
বাড়িখেলা‘ওয়ার্নের দিনে’ বিধ্বংসী বোলিংয়ে গ্রিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

‘ওয়ার্নের দিনে’ বিধ্বংসী বোলিংয়ে গ্রিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৬ ডিসেম্বর: মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট ১৮৯ রানে। এই নিয়ে টানা সাত টেস্ট ইনিংসে তারা থমকে গেল দুইশর আগে। প্রোটিয়া ব্যাটিং বিধ্বস্ত করার মূল নায়ক গ্রিন। ২৭ রানে তার শিকার ৫ উইকেট। ১৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। আক্রমণে আসেন তিনি এ দিন পাঁচ নম্বর বোলার হিসেবে। অস্ট্রেলিয়ার সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে এত পরে বল হাতে নিয়ে ৫ উইকেট নিতে পেরেছেন আগে কেবল চারজন পেসার। সবশেষ ছিলেন স্টিভ ওয়াহ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ১৯৯৪ সালে। অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করে ১ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে। বাজে ব্যাটিং ফর্মের কারণে তুমুল আলোচনায় থাকা ডেভিড ওয়ার্নার তার শততম টেস্টের প্রথম দিন শেষ করেন ৩২ রানে অপরাজিত থেকে। ওয়ার্নের ঘরের মাঠে তাকে এ দিন স্মরণ করা হয় নানাভাবে। যে ফ্লপি হ্যাট ছিল তার ট্রেডমার্ক, সেরকম হ্যাট পরে টেস্ট শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীতে দাঁড়ান দুই দলের ক্রিকেটাররা। দর্শকদের অনেকের মাথায়ও দেখা যায় সেই ফ্লপি হ্যাট। ওয়ার্নের মতোই মুখে জিঙ্ক ক্রিম মেখে আসেন অনেকেই। মাঠের এক পাশে বড় করে আঁকা হয় টেস্ট ক্যাপ নম্বর ‘৩৫০।’ 

টেস্ট ক্যাম্প নম্বর অনুযায়ী, দুপুর ৩ টা ৫০টা মিনিটে একটু থমকে থাকে খেলা। ফ্লপি হ্যাট নাড়িয়ে সম্মান জানান দর্শকেরা। ৬০ হাজারের বেশি দর্শকের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকেন, ‘ওয়ার্নি, ওয়ার্নি…।’ মাঠের বড় পর্দায় দিনজুড়ে দেখানো হয় ওয়ার্নের বোলিংয়ের ক্লিপিংস। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মাইক হাসিরা ধারাভাষ্যে স্মরণ করেন নানা ঘটনা। সব মিলিয়ে উদযাপন করা হয় তার ক্যারিয়ার। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররাও উপলক্ষ রাঙিয়ে তোলেন দারুণ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের পরিষ্কার ভাগ তিনটি। প্রথম ৫ উইকেট হারায় তারা ৬৭ রানে। শেষ ৫ উইকেট পড়ে তাদের স্রেফ ১০ রানে। দুই ধসের মধ্যে ১১২ রানের জুটি গড়েন কাইল ভেরেইনা ও মার্কো ইয়ানসেন। দুজনেই করেন ফিফটি। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দেখে যেমন মনে হয়, উইকেট মোটেও এতটা ভয়ঙ্কর নয়। আগে টেস্টে ব্রিজবেনের সবুজ উইকেটের তুলনায় তো এই উইকেট তো অনক ভালো। হালকা ঘাসের ছোঁয়া থাকলেও যথেষ্টই ব্যাটিং সহায়ক। এই উইকেটেই টস জিতে আগে বোলিং নেন প্যাট কামিন্স। ধারাভাষ্যকাররা তো বটেই, অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের সিদ্ধান্তে চমকে যান দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ডিন এলগারও। হাসিমুখেই তিনি আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তার চাওয়া ছিল যে আগে ব্যাট করাই। সেই অবশ্য অবশ্য মিলিয়ে যায় লাঞ্চের আগেই। কামিন্সের সিদ্ধান্ত প্রমাণিত হয় ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে। 

আগের টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি কোনো ইনিংসেই টিকতে পারেনি ৫ ওভারও। এবারও ডিন এলগার সুযোগ দেন চতুর্থ ওভারেই। কিন্তু ৭ রানে প্রোটিয়া অধিনায়কের ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি কামিন্স। অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট আর দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নিয়ে দিনের নায়কদের একজন মার্নাস লাবুশেনও। একটু পর দক্ষিণ আফ্রিকার অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে এলগার পা রাখেন ৫ হাজার টেস্ট রানে। সরল এরভিয়াকে নিয়ে নিরাপদে কাটিয়ে দেন ১০ ওভার। এরপরই ভাঙে জুটি। স্কট বোল্যান্ডকে শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করে তৃতীয় স্লিপে ধরা পড়েন এরভিয়া। তিন বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে টিয়ারনিস ডে ব্রেইন ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি। এলগারকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়ে ওঠার আভাস দেন। কিন্তু বাজে শটে নিজের পতন ডেকে আনে ডে ব্রেইন। ক্যারেমন গ্রিনকে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন উইকেটের পেছনে। তার পরও তখনও পর্যন্ত সেশনে ছিল ভারসাম্য। কিন্তু এক ওভারেই বদলে যায় চিত্র। লাঞ্চের ৮ মিনিট আগে মার্নাস লাবুশেনের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট এলগার (২৬)। 

মিচেল স্টার্কের বল কাভারের দিকে ঠেলে রান নিতে ছোটেন এলগার। মিড অফ থেকে ত্বরিত ছুটে গিয়ে লাবুশেন স্লাইড দিয়ে বল কুড়িয়ে উল্টো ঘুরে চোখের পলকে থ্রো করে দেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে। বল ছোবল দেয় স্টাম্পে, এলগার তখনও বেশ দূরে ক্রিজ থেকে। পরের বলেই স্টার্কের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন টেম্বা বাভুমা। লাঞ্চের আগের ২০ মিনিটে স্রেফ ২ রানে ৩ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। লাঞ্চের পরপর আরেকটি আঘাত তাদের জন্য। এবারও দৃশ্যপটে লাবুশেন। অফ স্টাম্পের বাইরে স্টার্কের হাফ ভলি বলে ড্রাইভ করে নিচে রাখতে পারেননি খায়া জন্ডো। মিড অফ থেকে একটু করে ডান দিকে ফুল লেংথ ডাইভে অসাধারণ ক্ষীপ্রতায় বল মুঠোয় জমান লাবুশেন। ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকা দলকে এরপর ভরসা জোগান কাইল ভেরেইনা ও মার্কো ইয়ানসেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে দুজন গড়ে তোলেন জুটি। শুধু উইকেট ধরে রাখাই নয়, পাল্টা আক্রমণে অস্ট্রেলিয়ানদের কিছুটা এলোমেলো করে দেন তারা। দ্বিতীয় সেশনে আর কোনো উইকেটই হারায়নি প্রোটিয়ারা।শেষ সেশনে ফিফটি পেরিয়ে যান দুজনই। আগের টেস্টে সবুজ উইকেটে ৬৪ রানের ইনিংসের পর এবার ভেরেইনা ফিফটি করে ৮০ বলে। মূল কাজ বোলিং হলেও ব্যাটিং সামর্থ্যের ছাপ রেখে ইয়ানসেন প্রথম টেস্ট ফিফটির স্বাদ পান ১১৮ বলে। 

অস্ট্রেলিয়ার মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই জুটি শেষ পর্য্ত ভাঙেন গ্রিন। বাকি কাজও তিনি সেরে ফেলেন দারুণ বোলিংয়ে। শুরুতে তিনি ফেরান ৫২ রান করা ভেরেইনাকে। পরের ওভারে তার শিকার ৫৯ রান করা ইয়ানসেন। এরপর কাগিসো রাবাদা স্টাম্পে টেনে আনেন বল। এর মধ্যেই ন্যাথান লায়নকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন কেশভ মহারাজ। গ্রিন ৫ উইকেট পূর্ণ করেন লুঙ্গি এনগিডির স্টাম্প উড়িয়ে। স্বপ্নের বোলিংয়ে ৫ উইকেট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি বল উঁচিয়ে। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনার উসমান খাওয়াজাকে হারায় ১ রানে। তবে ওয়ার্নারের ব্যাটে ছিল ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত। দ্বিতীয় দিনে তাকে ঘিরেই থাকবে আগ্রহ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৬৮.৪ ওভারে ১৮৯ (এলগার ২৬, এরভিয়া ১৮, ডে ব্রেইন ১২, বাভুমা ১, জন্ডো ৫, ভেরেইনা ৫২, ইয়ানসেন ৫৯, মহারাজ ২, রাবাদা ৪, নরকিয়া ১, এনগিডি ২*; স্টার্ক ১৩-২-৩৯-২, কামিন্স ১৪-৪-৩০-০, বোল্যান্ড ১৪-২-৩৪-১, লায়ন ১৭-৩-৫৩-১, গ্রিন ১০.৩-৩-২৭-৫)। 

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ১২ ওভারে ৪৫/১ (ওয়ার্নার ৩২*, খাওয়াজা ১, লাবুশেন ৫*; রাবাদা ৫-১-২৪-১, এনগিডি ৩-২-১-০, ইয়ানসেন ৩-০-৮-০, নরকিয়া ১-

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: Alert: Content selection is disabled!!