Friday, June 20, 2025
বাড়িরাজ্যসিপাহিজলা অভয়ারণ্যে দুই সিংহ শাবকের মৃত্যু, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা কর্তৃপক্ষের

সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে দুই সিংহ শাবকের মৃত্যু, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা কর্তৃপক্ষের

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২৭ মে : রাজ্যের গর্ব সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে একের পর এক পশু মৃত্যুর ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। হতাশ রাজ্যের পশুপ্রেমীরা। আশ্চর্যের বিষয় হলো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ একের পর এক পশুমৃত্যুর মূল রহস্য উদঘাটনের পরিবর্তে ড্যামেজ কন্ট্রোলে ব্যস্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। নানা যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমের সামনে। গত এক পক্ষকালের মধ্যে চার বছর বয়সের দুটি পুরুষ সিংহ ও একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্পটেড হরিণের মৃত্যু – হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী চিড়িয়াখানায় খাদ্য সরবরাহকারী বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় নেতৃত্বদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর অতি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে চলেছে।

যার খেসারত দিচ্ছে অবুঝ প্রাণীরা। অভিযোগ, বাঘ, সিংহকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ কেজি তাজা মাংস দেওয়ার পরিবর্তে রুগ্ন অসুস্থ ও মৃত্যু পথযাত্রী অসুস্থ প্রাণীদের নিম্নমানের মাংস সরবরাহ করছে। এতে প্রাণীরা সুস্থ থাকার পরিবর্তে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে একের পর এক সিংহ ও হরিণের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপাহিজলা চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. কেশব দেবনাথ জানান, সিংহের মৃত্যুগুলি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো পশুর পিতা-মাতা যদি সম্পর্কে আপন ভাই বোন হয়ে থাকে তাহলে তাদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া যেকোনো পশুর মধ্যে জেনেটিক্যাল ডিস অর্ডারের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। গত ১৫ মে ও ২৫ মে চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া চার বছর বয়সি মিরো ও চিরো। তাদের পিতা মাতা ছিল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অন্তর্গত গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে পশ্চিমবঙ্গের নর্থ বেঙ্গল সাফারিতে পাঠানো রাম সীতা। তারা দু’জনেই ছিল সম্পর্কে ভাই বোন।চার বছর আগে রাম সীতা মিরো ও চিরুর সাথে আরও দুটি সিংহ শাবকের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু ওই দুটি শিশু শাবক জন্মের পরেই মৃত্যুবরণ করে। ফলে মিরো ও চিরো দুই ভাই গত চার বছর ধরে সিপাহিজলা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকে শরীরে নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও। মৃত্যুর আগে তাদের ওজন হয়েছিল প্রায় একশ কুড়ি কেজি এবং তাদের ঠিকানা ছিল ১৯ নম্বর এনক্লোজার। গত ৬ মে থেকে দুটি সিংহ শাবকেরই লো-ইমিউনিটির সমস্যা দেখা দেয় সিভিয়ার গ্যাস্ট্রাইটিসের কারণে দুটি সিংহ শাবকই কিছুদিন কিছু খেতে পারছিল না। ফলে চিড়িয়াখানার হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে স্যালাইন সহ আনুষঙ্গিক ঔষধপত্র দেওয়া সত্ত্বেও শিডিউল ওয়ান ক্যাটাগোরির দুটি সিংহ শাবকের শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ফলে আর কে নগর স্থিত ত্রিপুরা ভেটেরিনারি মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসকদের একটি দল সিপাহিজলা চিড়িয়াখানায় পৌঁছে মৃত সিংহের ময়না তদন্ত শেষে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে হায়দ্রাবাদের একটি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে। অন্যদিকে ভারতীয় জু-অথরিটির নিয়ম অনুযায়ী রবিবারই চিড়িয়াখানার ভেতরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মৃত সিংহটির দেহটি আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানাদিক তুলে ধরলেও চিড়িয়াখানায় বছরের পর বছর অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করার ফলেই চিড়িয়াখানার পশুরা দিনের পর দিন দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য