স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২২ মার্চ : সম্প্রতি দেখা যায় কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট এবং দেশের বিচার বিভাগের উপর একের পর এক আক্রমণ করছে। এবং বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করছেন। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে যে নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে তার বিরোধিতা করছে সরকার। এক প্রকার ভাবে সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করছে সরকার।
এতে আইনজীবীরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বুধবার ত্রিপুরা বার এসোসিয়েশনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা জানান বরিষ্ঠ আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এবং হাইকোর্টে প্রাক্তন বিচারপতি বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিলে তাদের দেশদ্রোহী বলে আখ্যা দিচ্ছে সরকার। এটা ভয়ংকর ঘটনা। এটা বিচার ব্যবস্থা মুখ বন্ধ করার জন্য ধমক। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বিচারকদের বলছে তারা সরকারের বিরুদ্ধে এবং নাগরিক স্বার্থে যাতে কেউ কথা না বলেন। তাই আজকে সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে জনমত গ্রহণ করতে চাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, দেশের আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায়, সংবিধানের রক্ষায় এবং আইনের শাসন রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট এবং উচ্চ আদালত গুলি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের সংবিধান এই সুপ্রিম কোর্টের উপর দায়িত্ব-নেস্ত করেছে।
এবং দেশের আইনজীবীদেরও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন। কিন্তু গত দু-তিন মাস ধরে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরণ রিজিজো একের পর এক অবাঞ্ছিত মন্তব্য করছেন। বিচার বিভাগের এক্তিয়ার নিয়োগ প্রশ্ন তুলছেন তিনি। এমনকি উপরাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধরখড় রাজ্যসভায় বক্তব্য করার সময় সাংবিধানিক বিষয় ও আইন নিয়ে মন্তব্য করছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসে যখন এই ধরনের মন্তব্য করা হয় তখন বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ বলে ধরে নেওয়া হয়। সুতরাং আইনজীবীরা লক্ষ্য করছে বিচার বিভাগ আজকে আক্রান্ত। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতি সহ আইনজীবীদের বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশ করছেন। যার ফলে বদলি এবং আটকে আটকে থাকছে। আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে আরো বলেন ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ মহন্তী গত ১০ নভেম্বর অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ প্রধান বিচারপ্রতি নিয়োগ হয়নি।
এমনকি হাইকোর্টে ৫ জন বিচারপতি পরিবর্তে দুজন বিচারপতি দিয়ে চলছে। কিছুদিন পূর্বে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে ত্রিপুরার আইনজীবীরা পূর্ণাঙ্গ প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা এবং বিচারকের শূন্য পদগুলি পূরণ করার দাবি জানানো হয়েছিল। কারণ পূর্ণাঙ্গ প্রধান বিচারপতি না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের এবং আইনজীবীদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কিন্তু দেখা যায় গত আগস্ট মাসে ঝাড়খণ্ডের উচ্চ আদালতের বিচারপতিকে ত্রিপুরার উচ্চ আদালতে বদলি করার সুপারিশ করেছিলেন। পরবর্তী সময় দেখা গেছে কেন্দ্রীয় সরকার এই সুপারিশে মান্যতা দেয় নি। যার ফলে ঝারখন্ড থেকে বিচারপতি এ পি সিং ত্রিপুরায় আসতে পারেন নি। যার ফলে ত্রিপুরা রাজ্যে বিচার ব্যবস্থা প্রচন্ড প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান পুরুষোত্তম রায় বর্মন। বুধবার পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দিয়ে দাবি জানানো হয়েছে ঝাড়খণ্ডের প্রধান বিচারপতিকে যাতে অবিলম্বে ত্রিপুরা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি বিচারকদের শূন্য পদ পূরণ করার বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী শংকর দেব, হরিবল দেবনাথ, ভাস্কর দেববর্মা সহ অন্যান্যরা।