স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১০ জানুয়ারি: গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে সর্বশেষ লড়াইয়ে ৯ সেনা হারানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। এই নিয়ে গাজা যুদ্ধে নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা ১৮৭ জনে দাঁড়িয়েছে।হামাসের সঙ্গে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে এটি ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের অন্যতম সবচেয়ে বেশি সেনা মৃত্যুর ঘটনা।এ সময় অধিকাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে। নিহতদের বেশিরভাগ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্য। তারা হামাসের টানেল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অভিযানরত ছিল, জানিয়েছে রয়টার্স।গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে হামাসকে নির্মূল করা হয়েছে বলে শনিবার ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। এরপর থেকে গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
মঙ্গলবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলের প্রধান সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি জানান, সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনারা হামাসের একটি অবকাঠামো ধ্বংস করছিল, এ সময় দুর্ঘটনাবশত এক বিস্ফোরণ ঘটে আর তাতে ছয় সেনা নিহত ও ১৪ জন আহত হন।তিনি বলেন, “গতকাল আমরা আল-বুরেইজে হামাসের বৃহত্তম রকেট ও অস্ত্র তৈরির কারখানা দেখিয়েছিলাম। ভূগর্ভস্থ ওই অস্ত্র কারখানাটি ধ্বংসের সময় শত্রুদের একটি লক্ষ্যস্থল শনাক্ত হয়, সেখানে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হলে বিস্ফোরণ ঘটে।“ট্যাংকের গোলা নিকটবর্তী একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আঘাত হেনেছে আর তাতেই বিস্ফোরণটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।” সোমবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলে আল-বুরেইজ এলাকার কারাখানাটি ঘুরে দেখাতে একদল সাংবাদিককে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। বুরেইজ এলাকাটি কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ও স্থল হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি কারখানাটিতে মর্টার শেলের মতো মানসম্মত যুদ্ধাস্ত্রও তৈরি হতো। পুরো গাজা ভূখণ্ডজুড়ে যুদ্ধ ইউনিটগুলোর কাছে এসব অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওয়ার্কসপগুলো ভূগর্ভস্থ লিফটের মাধ্যমে টানেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল।“লিফটে করে নিয়ে তারা রকেটগুলোকে নিরাপদ একটি জায়গায় রাখতো। তারপর টানেলের ভেতর দিয়ে সেগুলোকে অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতো। এক জায়গায় রকেটগুলো তৈরি করে আরেক জায়গায় নিয়ে সেগুলো ছোড়া হতো,” সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন হাগারি।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা পর গাজায় ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। তারপর থেকে গাজায় ব্যাপক টানেল নেটওয়ার্ক খুঁজে পেয়ে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী।ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, হামাস সচেতনভাবে বেসামরিক এলাকায় টানেলসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে যেন সেগুলোতে হামলা চালানো কঠিন হয়। হামাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েল নির্বিচারে বেসামরিক লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে আর ভূখণ্ডটির ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।