স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,৩ নভেম্বর: চীনে কোভিড মোকাবেলায় জারি থাকা লকডাউনের কারণে সময়মত এক শিশুর জীবন-রক্ষাকারী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে। স্যোশাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তোলপাড়।চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় ল্যানঝোউয়ে মঙ্গলবার একটি বাড়িতে গ্যাস লিক হয়ে এক দুর্ঘটনায় তিন বছরের বালক ওয়েংসুয়ান মারা যায়। ছেলেটির বাবা তুও শিলেই বিবিসি-র কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।তিনি বলেছেন, এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিনি ছেলেকে আবাসিক ভবন থেকে বাইরে নিয়ে যেতে পারেননি। যদিও পুলিশ বলছে, তারা জরুরি ফোন কল পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছিল।স্থানীয় বাসিন্দারা বিবিসি-কে বলেছেন, ওই এলাকাটিতে অক্টোবর থেকেই কোভিড লকডাউন জারি আছে।শিশু ওয়েংসুয়ানের বাবা তুও বলেন, “আমার ছেলের মৃত্যুর কারণ ছিল একটি দুর্ঘটনা। কিন্তু সাহায্যের জন্য আমাদের ফোনকলের সময়টিতে গোটা প্রক্রিয়াতেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া এবং কর্তব্যে অবহেলা ছিল।”ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাস্তায় নামে। বিবিসি-কে স্থানীয়দের পাঠানো ভিডিওতে দেখা গেছে, এলাকাটিতে পুলিশ মোতায়েন আছে। একটি ভিডিওতে কালো ইউনিফর্ম পরা একদল লোককে টেনে-হিচড়ে একজনকে নিয়ে যাওয়া এবং লাথি মারতে দেখা গেছে।
পৌঁছায়নি অ্যাম্বুলেন্স:
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তুও শিলেই এর স্ত্রী ঘর গরম রাখতে এবং পানি ফুটাতে এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করেন। এরপর তিনি গোসল করতে চলে যান।এর কিছুক্ষণ পরই তুও একটি বিকট শব্দ শোনেন। দৌড়ে ঘরে গিয়ে গ্যাসের ধোঁয়ার মধ্যে স্ত্রীকে পিছলে পড়ে যেতে দেখতে পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বয়েলার বন্ধ করে তুও প্রথমে স্ত্রীকে সামলানোর চেষ্টা করেন।স্ত্রী একটু ধাতস্থ হতেই তুও ছেলে ওয়েংসুয়ানের কাছে দৌড়ে যান। দেখেন তার অবস্থাও ভাল না। সে ঘুমচ্ছিল। কিন্তু তার চেতনা ছিল না। অচেতন অবস্থায় কেবল শ্বাস চলছিল ওয়েংসুয়ানের। তুও তখন মরিয়া হয়ে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা পুলিশ ডাকতে কল করেন। কিন্তু কেউই চটজলদি সাড়া দেয়নি।৩০ মিনিট এভাবে কাটার পর ওয়েংসুয়ানের অবস্থার অবনতি হয়। তুও তখন কঠোর লকডাউনের মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে কমিউনিটি কম্পাউন্ডের প্রবেশপথে যান। কিন্তু গেটের রক্ষী তাকে বাইরে যেতে দেয়নি। বরং উল্টো তাকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করতে বলে।অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোনের পর ফোন করেও যখন প্রায় একঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে তখন তুও আর অপেক্ষা না করে কোভিড চেকপয়েন্টের বেষ্টনি ভেঙেই ছেলেকে বাইরে নিয়ে যান। স্থানীয় কিছু লোকজন তখন দয়া পরবশ হয়ে ট্যাক্সিও ডেকে দেয় তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের ড্রাইভে হাসপাতালে পৌঁছেও শেষ রক্ষা আর হয়নি। সেখানে পৌঁছতে না পৌঁছতেই মারা যায় ওয়েংসুয়ান। তুওর কথায়, “কেউ কোনও সাহায্য করেনি। কোভিড চেকপয়েন্টে বাধা, কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, সমস্যা এড়ানো, গাফিলতি- এসবের কারণেই আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।”