Monday, February 10, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদশ্রীলঙ্কার শেহান করুণাতিলকের ‘পরলৌকিক পরিহাস’ জিতল বুকার

শ্রীলঙ্কার শেহান করুণাতিলকের ‘পরলৌকিক পরিহাস’ জিতল বুকার

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,১৮ অক্টোবর: গৃহযুদ্ধের হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে লেখা বিদ্রুপাত্মক উপন্যাস ‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেদা’র জন্য বুকার পুরস্কার জিতলেন শ্রীলঙ্কার লেখক শেহান করুণাতিলক।তার এ ‘অতিপ্রাকৃত’ উপন্যাসের নায়ক একজন আলোকচিত্রী, যিনি ১৯৯০ এর দশকে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের মধ্যে মারা যান এবং জেগে ওঠেন মহাজাগতিক কোনো এক ভিসা অফিসে; কে তাকে মারল, সেটা তিনি নিজেও জানেন না।জীবনের ওপারের সেই জীবন থেকেই মালি আলমেদা সাতটি চাঁদের মাধ্যমে নিজের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন, যেন তারা যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে তার তোলা ছবির গোপন ভাণ্ডার খুঁজে বের করেন, সেসব ছবি প্রকাশ করে কাঁপিয়ে দেন শ্রীলঙ্কাকে।বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্রিটেনের কুইন কনসর্ট ক্যামিলা সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেহান করুণাতিলকের হাতে তুলে দেন সাহিত্যের এই সম্মানজনক পুরস্কার।তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় করুণাতিলক বলেন, এ পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম আসাই ছিল তার জন্য এক বিরাট সম্মান।কেবল যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার ‘ফিকশন’ বুকার পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়। বুকারজয়ী লেখক পান ৫০ হাজার পাউন্ড। আর সংক্ষিপ্ত তালিকায় আসা বাকি পাঁচ লেখককে আড়াই হাজার পাউন্ড করে দেওয়া হয়।করুণাতিলক বলেন, শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের অবসানের পর যখন তার দেশে বিতর্ক চলছিল – ওই যুদ্ধে কত বেসামরিক মানুষের প্রাণ গেছে, সেই হত্যার দায় কার – তখন, ২০০৯ সালে তিনি ঠিক করেন, একটি ভুতের গল্প লিখবেন, যেখানে মৃত ব্যক্তি তার নিজের মতামত দিতে পারবে।  

বইটির প্রশংসায় বুকার পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি নেইল ম্যাকগ্রেগর বলেন, করুণাতিলকের এই উপন্যাস যেন এক ‘পরলৌকিক পরিহাস’, তার লেখা পাঠককে জীবন আর মৃত্যুর মাঝে চমকপ্রদ এক রোলারকোস্টারে ভ্রমণ করিয়ে আনে। পুরস্কার গ্রহণ করার পর করুণাতিলক বলেন, “আমি শুধু এটুকুই আশা করি, সেইদিন হয়ত বেশি দূরে নয়, যখন শ্রীলঙ্কা বুঝতে পারবে যে এইসব দুর্নীতি, জাতিগত বিভাজন এবং স্বজনপ্রীতির বিষয়গুলো ভালোকিছু দেয়নি, আর কখনো তা দেবেও না।”শ্রীলঙ্কার এই লেখব বলেছেন, কেউ যেন তার লেখাকে বাস্তব কোনো ঘটনা বা ‘পলিটিক্যাল স্যাটায়ার’ না ভাবেন। তিনি এও বলেছেন, গত অগাস্টে সালমান রুশদী ছুরি হামলার শিকার হওয়ার পর নিজের কিছু ছোটগল্পে তার নিজেকেই ‘সেন্সর’ চালাতে হয়েছে।   “রুশদীর ঘটনাটা যখন ঘটল, আমি তখন একটা ছোট গল্পের সঙ্কলন প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ওখানে কয়েকটা গল্প ছিল, সেগুলো কোনো ধর্মের কাউকে আহত করবে বলে আমার মনে হয়নি। কিন্তু আমার স্ত্রী বললো, ‘এগুলো না ছাপলে হয় না? তোমার দুটো ছোট বাচ্চা আছে, গল্পগুলো অত ভালোও না, বাদ দাও না’।”  করুণাতিলকের ভাষায়, দক্ষিণ এশিয়ায় যারা লেখালেখি করেন, তাদের সবার ঘাড়ের ওপর ওই খাঁড়াটা ঝুলতে থাকে, বিশেষ করে তিনি যদি রাজনীতি বা ধর্ম নিয়ে লেখেন।‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেদা’ করুণাতিলকের দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রথম বইটি লেখার পর তিনি অপেক্ষা করেছেন দশ বছর। আসলে তিনি একজন আন্তর্জাতিক প্রকাশক খুঁজছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষা তাকে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার এনে দিয়েছে।  করুণাতিলকের প্রথম বই ‘চায়নাম্যান’ কমনওয়েলথ ব্যায়ক প্রাইজ জিতে নেয়। উইজডেন বইটিকে বর্ণনা করেছিল ক্রিকেট নিয়ে লেখা বইয়ের ইতিহাসের ‘দ্বিতীয় সেরা’ হিসেবে।১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া শেহান করুণাতিলক পেশায় বিজ্ঞাপনী সংস্থার কপিরাইটার। তার লেখা গান, চিত্রনাট্য এবং গল্প রোলিং স্টোন, জিকিউ এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকেও প্রকাশিত হয়েছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য