স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৭ ফেব্রুয়ারি: অ্যালেক্সি নাভালনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ প্রতিপক্ষ এবং কট্টর সমালোচক ছিলেন। সেই নাভালনি কারাগারে মারা গেছেন শুক্রবার। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।তার মৃত্যু হয়েছে সেকথা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। খোদ নাভালনির স্ত্রীও তার স্বামীর মৃত্যুর খবর কতটুকু সত্য তা নিয়ে সন্দিহান।কীভাবে নাভালনির মৃত্যু হল তা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। অনেকে ভাবছেন, নাভালনিও হয়ত প্রেসিডেন্ট পুতিনের অন্যান্য শত্রুদের মতোই রহস্যজনক পরিণতি বরণ করেছেন।শত্রুকে সরাতে মোক্ষম চালই হয়ত চেলেছেন পুতিন। একে একে পথের কাঁটা সরাচ্ছেন তিনি। ভাড়াটে সৈন্য ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের পর এবার সর্বশেষ শিকার হয়ে থাকতে পারেন নাভালনি।
রুশ কারা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, “নাভালনি হাঁটার পর অসুস্থ বোধ করেন এবং একটু পরই জ্ঞান হারান। দ্রুত চিকিৎসক দলকে ডাকা হয়। তারা জ্ঞান ফিরিয়ে আনা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে চিকিৎসকরা তার মৃত্যু ঘোষণা করেন। নাভালনির মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত চলছে।”অথচ একদিন আগেই নাভালনি ছিলেন প্রাণবন্ত। টিভিতে তাকে সহস্যে কথা বলা এবং কৌতুক করতেও দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার ভিডিও লিংকে তাকে এমন হাশিখুশি দেখা যায়।আর তারপর দিনই আচমকা তার মৃত্যুর খবর জানাল কারা কর্তৃপক্ষ। কী ভাবে পুতিনের এই সমালোচকের এমন আচমকা মৃত্যু হল তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কোনও তথ্য মেলেনি।ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তারাই প্রতিবেদন দেবেন।”নাভালনি খুন হয়েছেন বলে ইতোমধ্যেই অভিযোগ উঠতেত শুরু হয়েছে। নাভালনির শিবির বলছে, তার মৃত্যুর বিষয়টি তারা নিশ্চিত নন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর যে খবর জানিয়েছে, সেটি তাদের নাভালনিকে খুন করারই স্বীকারোক্তি বলে তারা মানছেন।
নাভালনির চিফ অব স্টাফ লিওনিদ ভলকোভ বলেছেন, “আমাদের রাষ্ট্রের প্রচারণা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। তার মৃ্ত্যুর খবর যদি সত্য হয়,তাহলে নাভালনি মরেননি। পুতিনই তাকে (নাভালনি) খুন করেছেন।”মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বক্তব্যে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনিও তার স্বামীর মৃত্যুর খবর নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তার কথায়, এ খবর দিয়েছে রাশিয়ার সরকারি সূত্র। তিনি বলেন, “আমরা পুতিন এবং তার সরকারকে বিশ্বাস করতে পারিনা। তারা সবসময় মিথ্যা বলে।”তবে ইউলিয়া এও বলেন, “খবরটি সত্য হয়ে থাকলে পুতিন এবং তার পুরো শাসকমণ্ডল, সরকার এর দায় বহন করবে; যা তারা এই দেশের সঙ্গে, আমার পরিবারের সঙ্গে, আমার স্বামীর সঙ্গে করেছে। সেই দিন খুব শিগগিরই আসবে।”রাশিয়ার ভয়াবহ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান তিনি।
ওদিকে, নাভালনির মৃত্যুর খবর পেয়ে তার আইনজীবী কারাগারের পথে রওনা হয়েছেন যেখানে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্স। নাভালনির মুখপাত্রও বলেছেন,তাদের দল এখনও নাভালনির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে পারেনি।নাভালনির মৃত্যুর জন্য পশ্চিমা দেশগুলো পুতিনকেই দায়ী করছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, এই মৃত্যুর জন্য পুতিনের জবাবদিহি করা উচিত।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলছেন, নাভালনির মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে থাকলে এটি পুতিনের গড়ে তোলা রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্রে পচন এবং দুর্বলতাকেই কেবল সামনে নিয়ে আসবে।
অ্যালেক্সি নাভালনি কেবল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচকই ছিলেন না। পুতিনের এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বীও মনে করা হত তাকে। ২০২১ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে তাকে। সে সময় তাকে জেলে ঢোকানো হয়।গত বছর ডিসেম্বরের দিকেও একবার তার রহস্যজনক মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল। আচমকাই তার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। রুশ সরকার গোপনে নাভালনিকে অজ্ঞাত জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে এবং অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছে বলে জল্পনা সৃষ্টি হয়। পরে জানা যায়, তিনি বন্দি ছিলেন সাইবেরিয়ার কারাগারে।রাশিয়ার এই জেলে বন্দিরের জীবন দুর্বিসহ করে তোলা হয়। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখা হলেও চলাফেরা এবং সুযোগ সুবিধার ওপর সেখানে রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা।
উগ্রপন্থায় উস্কানি এবং এই সংক্রান্ত একটি সংগঠন চালানোর মতো অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে অ্যালেক্সি নাভালনিকে গত বছর অগাষ্টে আরও ১৯ বছরের জেল দেয় আদালত। তবে সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছিলেন নাভালনি। তার বয়স ছিল মাত্র ৪৭ বছর। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।রাশিয়ার দুর্নীতি ও শাসনব্যবস্থার কড়া সমালোচক ছিলেন নাভালনি। রাশিয়ায় তিনি কয়েক যুগ ধরেই সরকার ও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলেন। দেশজুড়ে এ নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছিলেন। একারণে, তিনি হত্যার শিকার হয়ে থাকতে পারেন বলে জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে।