নয়াদিল্লি, ১১ ডিসেম্বর (হি.স.): সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারার অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ বহাল রেখেছে।প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সোমবার এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছেন, ওই পদক্ষেপ বৈধ।
৩৭০ ধারা ছিল ভারতে জম্মু ও কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য একটি সাময়িক সংস্থান। ভারতের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর যখন যুক্ত হয়, তখনই তার সার্বভৌমত্ব লোপ পেয়েছিল। প্রধান বিচারপতি বলেন, যে মূহুর্তে ভারতের সঙ্গে সংযুক্তি ঘটে, তখন থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের গণ পরিষদ বিলুপ্ত হয়। সংবিধান রচনার জন্যই কেবল এই গণ পরিষদ গঠিত হয়েছিল। সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে, ৩৭০ ধারার অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা থাকবে কিনা, দেশের রাষ্ট্রপতি সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
কেন্দ্রের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না বলেও, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে। ২০১৯ সালে কেন্দ্র সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করে। সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে ভাগ করা হয়। তার পরেই সুপ্রিম কোর্টে এই পদক্ষেপের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়। ৩৭০ ধারা বাতিলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বহু মামলা দায়ের হয়েছিল। সেগুলি একত্রে এনে সম্প্রতি শুনানি শুরু করে দেশের শীর্ষ আদালত। সোমবার তারই রায় ঘোষিত হয়েছে।
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত বৈধ। কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে অবিলম্বে বিধানসভা নির্বাচনের নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচন করাতে হবে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে রায়দান প্রক্রিয়া চলে। বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি এস কে কউল কল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গভাই, বিচারপতি সূর্য কান্ত। ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদটি বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার বিলোপ করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সেই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, অনুচ্ছেদ ৩৭০-এ জম্মু ও কাশ্মীরকে যে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তা সাময়িক। কাশ্মীরের গণপরিষদ বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও রাষ্ট্রপতির ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করার অধিকার ছিল। ফলে যা হয়েছে, তা অসাংবিধানিক নয়। জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দিতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, আর তা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মধ্যে পড়বে না। রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি সঞ্জয় কউল জানান, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এক মত।
কাশ্মীরে সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে বিচারপতি কউল বলেন, ‘‘শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা সেনার কাজ। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তাদের কাজ নয়। কাশ্মীরে সেনা ঢোকায় তার কঠিন মূল্য দিতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।’’ বিচারপতি খান্না বলেন, ‘‘কাশ্মীরে অনুচ্ছেদ ৩৭০ অপ্রতিসম ফেডেরালিজমের উদাহরণ ছিল। তা কখনও জম্মু ও কাশ্মীরের সার্বভৌমত্বের নির্দেশক নয়। তাই ওই অনুচ্ছেদ বাতিল কাশ্মীরের ফেডেরালিজম অক্ষুণ্ণই রেখেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এটি আশা, অগ্রগতি এবং ঐক্যের বার্তা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স মাধ্যমে জানিয়েছেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় শুধু আইনি রায় নয়; এটি একটি আশার আলো, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি এবং একটি শক্তিশালী, আরও অখন্ড ভারত গড়ার জন্য আমাদের সম্মিলিত সংকল্পের প্রমাণ।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্স মাধ্যমে জানিয়েছেন, “৩৭০ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই আমি। ৫ আগস্ট ২০১৯-এ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৩৭০ ধারা বাতিল করার একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারপর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে।”